স্যালুট মাহেরীন চৌধুরী! স্যালুট! ! ওরাও তো আমার সন্তান।

মাহেরীন চৌধুরীর দুই সন্তান আয়ান রহীদ মিয়াদ চৌধুরী ও আদিল রহীদ মাহিব চৌধুরী এবং স্বামী মনসুর আলী হেলাল শোকে পাথর হেয়ে গেছেন।
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী। তিনি অন্তত বিশজন শিক্ষার্থীর জীবন রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই চিরবিদায় নিয়েছেন।
এমন উদাহরণ এই যুগে এবং এই সময়ে বিরল! নীলফামারীরর জলঢাকা পৌরসভা এলাকায় জন্মেছিলেন তিনি। তাঁর জানাজায় গ্রামের অগণিত মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এর পূর্বে ঢাকায় তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
মাহেরীন চৌধুরীর দুই সন্তান আয়ান রহীদ মিয়াদ চৌধুরী ও আদিল রহীদ মাহিব চৌধুরী এবং স্বামী মনসুর আলী হেলাল শোকে পাথর হেয়ে গেছেন।
হাসপাতালে শেষ দেখার সময়ে স্বামী তাকে যখন বলেছিলেন, তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না? তখন মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা মাহেরীনের উত্তর, ওরাও তো আমার সন্তান।
-এই একটি ছোট কথার মধ্য দিয়ে ফুঠে উঠেছে পুরো শিক্ষক সমাজের মহত্তম দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা। এইতো আসল শিক্ষক! এইতো খাঁটি শিক্ষক যিনি সব শিক্ষার্থীকে নিজের সন্তান মনে করেন! এটি শুধু নাটক বা উপন্যাস লেখার জন্য নয়, বাস্তব, পুরো বাস্তব! যে অভাবনীয় ঘটনা মাইলস্টোনে ঘটেছে ঐ পরিস্থিতিতে মানুষ নিজের জান বাঁচানোর জন্য ছুটাছুটি করতে থাকে, কারুর দিকে তাকানোর কোন সময় থাকে না।
কিন্তু মাহেরীন চৌধুরী যে কাজটি করেছেন তা নিতান্তই একজন আদর্শ ,পুরো আদর্শ শিক্ষকের কাজ! যাকে বলে মানবতা! যাকে বলে মাতৃত্ব! আগুন লাগার পর অন্যরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে দৌঁড়াচিছলেন, আর মেহরীন চৌধুরী বাচ্চাদের বের করে আনছিলেন। বারবার ফিরে যাচ্ছিলেন বিপদজনক জোনে। বাকী বাচ্চাদের উদ্ধার করতে। শেষবার তিনি আর ফিরে আসতে পারেননি।
এই উদাহরণ পুরো শিক্ষক সমাজের জন্য, এই উদাহরণ চরম অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে চলা বর্তমান সমাজের জন্য! তিনি যে শিশুদুটোকে রেখে গেছেন তারাও সে রকম। তারা বলছেন ‘‘আমার মা একজন আসল যোদ্ধা!’’ তিনি প্রকৃতই একজন যোদ্ধা যিনি নিজের জীবন বাাঁচানোর জন্য যুদ্ধের মাঠ ছাড়েননি!
মাহেরীন চৌধুরী তাঁর জন্মভূমিতে নিয়মিত যেতেন। তাঁর শিক্ষানুরাগী মনোভাবের জন্য বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে এলাকাবাসী তাকে মনোনীয় করেছিলেন। আর একটি মহত কাজের উদাহরণ তিনি রেখে গেলেন। মাহেরীন চৌধুরী বাংলা ভার্সনের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। তাঁর প্রথম সন্তান মাইলস্টোন থেকেই এসএসসি পাস করেছেন, ছোট সন্তানটিও সেখানকার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মাহেরীন চৌধুরীর জীবন উৎসর্গ করা নিয়ে একটি প্রশ্ন আমাদের সামনে চলে আসে। তিনি কি জাতির সামনে, পৃথিবীর মানুষে সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছেন? আমরা যারা বেঁচে আছি তারা মেহরীন চৌধুরীকে কতটা সম্মান প্রদর্শন করেছি। কোনো মিডিয়া কি বিষয়টি সেভাবে তুলে ধরেছে? তিনি যদি ইউনিফর্ম পরা কিংবা কোনো ক্যডারভুক্ত শিক্ষক হতেন, কিংবা অন্য কোনো পেশার লোক হতেন তাহলেও কি তিনি এভাবে উপস্থাপিত হতেন?
হয়তো অনেক বিশেষণ যোগ করে, অনেক ঘটা করে অনেক কিছু করা হতো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে দেখেছি, ফার্ট লেডি বেগম রওশন এরশাদ বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটা পর্যন্ত বনার্ত্যদের জন্য ত্রাণের টাকা গ্রহণ করবেন। সেই খবর সমস্ত মিডিয়ায় যেভাবে চাউর করা হয়েছিল এবং ত্রাণ তহবিলে একটি চেক দেয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ যে লাইন ধরে শেরাটনের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন এক নজর ফার্ট লেডিকে দেখবেন এবং তার হাতে চেক প্রদান করে কয়েক সেকেন্ড মিডিয়া তাদের দেখাবে, তাদের জীবন ধন্য হয়ে যাবে সারাজীবনের জন্য! এ রকম সব উদাহরণের মাঝে হারিয়ে যায় আমাদের প্রকৃত বীর, প্রকৃত মানুষ, প্রকৃত শিক্ষক, প্রকৃত উপকারের কথা!
স্যালুট মাহেরীন চৌধুরী! স্যালুট আপনার স্বামী ও সন্তানদের!! দেশের সব শিক্ষকের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাচিছ সশ্রদ্ধ সালাম! !! গোটা পৃথিবীর শিক্ষকদের জন্য আপনি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে গেলেন!!!!
লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক
YDInnwtIxyyWEu
YDInnwtIxyyWEu