বুয়েটে ৪-এ ৪, এমআইটিসহ বিশ্বসেরা ৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স, পৃথিবী ছাড়া সৌম্য কেন বললেন—‘আমার আমেরিকান স্বপ্ন মৃত’

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহার উৎসব, কিন্তু এর মাঝেই একটি পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শুধু একটি পরিবার বললে ভুল, বিদেশ পড়ুয়া গোটা কমিউনিটি শোকার্ত মেধাবী এক তরুণের মৃত্যুতে। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার পাশের একটি লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার নিথর দেহ। নাম শাশ্বত সৌম্য—বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
একজন স্বপ্নবাজ, প্রতিভাধর তরুণ। যার প্রতিটি পদক্ষেপই যেন ছিল নিখুঁত; যার চোখে ছিল বিশ্বজয়ের আকাঙ্ক্ষা। ৪.০০ স্কেলের মধ্যে ৪.০০ সিজিপিএ পেয়ে বুয়েটের সিএসই বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছিলেন, যা ছিল অত্যন্ত বিরল ও প্রশংসনীয় অর্জন। এরপর মিলেছিল এমআইটির মতো উচ্চশিক্ষার স্বপ্নদ্বার, এমনকি কার্নেগী মেলন ও প্রিন্সটন থেকেও অফার পেয়েছিলেন। কিন্তু এমন একজন মেধাবী তরুণ কীভাবে হঠাৎ করেই থমকে গেলেন?
শিক্ষাজীবন থেকে জানা যায়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন শাশ্বত সৌম্য। সেখানেই সপ্তম শ্রেণিতে গণিতে অনেক কম নম্বর পাওয়ার পর পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হতে শুরু করেন। আইডিয়াল থেকে স্কুলজীবন ও নটরডেম কলেজে থেকে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। এর আগে গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে ছোটবেলা থেকেই সংগীতের ভুবনে বিচরণ করা শাশ্বত সৌম্য বুয়েটে কাটানো সময় নিয়ে বলতে গেলেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার গান গাওয়ার স্মৃতিগুলো রোমন্থন করেন। তিনি নটরডেম 'কালচারাল ক্লাব' এবং 'বুয়েট-মূর্ছনার' হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। পড়াশুনার বাইরে এসব কাজে যুক্ত থেকেও তিনি নিজ ব্যাচে তৃতীয় হয়ে স্নাতক শেষ করেন।
এমআইটির সাথে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়—কার্নেগী মেলন ও প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অফার পাওয়া শাশ্বত সৌম্য বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সেরা এইসব বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একাডেমিক রেজাল্ট কিংবা গবেষণাই নয়, তারা লেটার অব রেকমেন্ডেশন, স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি), চাকরির অভিজ্ঞতা কিংবা ভাষার দক্ষতা—সবকিছু মিলিয়েই তারা আবেদনগুলোকে যাচাই করে। তাই সবার উচিত প্রতিটি অংশে নিজের সর্বোচ্চটাই দেওয়া।’ তার বক্তব্য, ‘বুয়েট সিএসই থেকে প্রথমবারের মতো এমআইটি, কার্নেগী মেলন ও প্রিন্সটন- তিন বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার পাওয়াটা স্বপ্নের মতো সুন্দর একটা অনুভূতি, যেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
শাশ্বত সৌম্য সম্প্রতি গিয়েছিলেন ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক রিসার্চ কনফারেন্সে অংশ নিতে। সেখানে বক্তব্যও দেন। তিনি জানান, “আমি জানি আমি যা করি তাতে আমি ভালো।” কনফারেন্স শেষে তাকে কাজের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তবে এরপরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন হতাশার সুরে। তিনি লিখেন, “The Great American Dream is Dead.” প্রশ্ন তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘ফ্রিডম’, ‘ইকুইটি’ ও ‘জাস্টিস’ নিয়ে। বলেছিলেন, এই দেশ এক সময় দক্ষ অভিবাসীদের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, আজ সেই দেশই অভিবাসীদের নিরুৎসাহিত করছে।
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “UBC-তে বক্তৃতার পর এখানকার NLP গবেষক দল আমাকে কিছুদিনের জন্য কাজ করার প্রস্তাব দেয়। এক রাত চিন্তা করে আমি রাজি হয়ে যাই। কিন্তু আমার অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আমার আমেরিকান স্বপ্ন মৃত এবং তা মৃতই থাকবে। যে দেশটা এক সময় দক্ষ অভিবাসীদের উপর দাঁড়িয়ে ছিল, এখন তারা সেসব অভিবাসীদের নিরুৎসাহিত করছে। মানুষ, সঠিক সিদ্ধান্ত নাও। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের আকর্ষণ হারাচ্ছে— বিশেষ করে তাদের কাছে যারা শুধু গবেষণা আর কাজ দিয়ে দুনিয়াকে বদলাতে চায়।” এই পোস্টের ক’দিন পরই তার মৃত্যুর খবর আসে।
সহপাঠীরা বলছেন, এই মৃত্যু শুধুই একটি জীবন থেমে যাওয়া নয়, এটি আমাদের সমাজব্যবস্থা, সুযোগ-সুবিধা ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে। আমরা কী সত্যিই আমাদের মেধাবীদের ধরে রাখতে পারছি? তারা কি পাচ্ছে তাদের যোগ্য স্বীকৃতি, নাকি আশাভঙ্গ, অনিশ্চয়তা আর বৈষম্যের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সম্ভাবনার প্রদীপ? একটা সময়, বুয়েট ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক মঞ্চে গান গাইতেন তিনি। বন্ধুরা তাকে চিনত প্রাণচঞ্চল, আত্মবিশ্বাসী এক তরুণ হিসেবে। আবার সেই বন্ধুরাই আজ তার স্মৃতিচারণ করছেন চোখের জল ফেলে। তার এক বন্ধু, মাহমুদুল ইসলাম—যিনি বর্তমানে বুয়েটের শিক্ষক—বলছিলেন, “এই শূন্যতা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়।”
PQwAWJMTA
FbizkpiLO
FbizkpiLO
PQwAWJMTA
UjkbeqycTfXTF
UjkbeqycTfXTF
ZcGTQuUeBspzn
ZcGTQuUeBspzn
uurCuRBJBPlUxjB
uurCuRBJBPlUxjB
MxZLuuurRjh
MxZLuuurRjh
GdUevTAeDNq
GdUevTAeDNq
JMHDORguGZ
JMHDORguGZ